কাজল রেখা পর্বঃ ১ | ভূতুরে গপ্পো

হাতে রশি নিয়ে আত্মহত্যা করতে এগিয়ে যাচ্ছে কাজল রেখা । অন্ধকার রাতে একরাশ নিশ্চুপ নিরবতা কে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটছে সে । তার অশ্রু সিক্ত ন

 

কাজল রেখা পর্বঃ ১, ভূতুরে গপ্পো
কাজল রেখা পর্বঃ ১, ভূতুরে গপ্পো

কাজল রেখা

পর্বঃ ১

হাতে রশি নিয়ে আত্মহত্যা করতে এগিয়ে যাচ্ছে কাজল রেখা । অন্ধকার রাতে একরাশ নিশ্চুপ নিরবতা কে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটছে সে ।

তার  অশ্রু সিক্ত নয়নে যেনো কোনো আশার আলো নেই ।  কি লাভ বেঁচে থেকে, যেখানে তার কোনো মূল্য নেই।


সন টা ২০০২ সাল,

 সিরাজগঞ্জের প্রত্যান্ত এক গ্রামের ছেলে নজির মিয়া। বিদেশে থাকতেন তিনি। পূর্বে পারিবারিক অভাব থাকলেও, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পর বেশ ভালোই সচ্ছলতা এসেছে নজির মিয়ার পরিবারে ।


নজির মিয়ার বাপ ওসমান মিয়ার পুরোনো বন্ধু শাকের আলী, তার একমাত্র কন্যা ফুলবানু । তার সঙ্গে অনেক ধুমধাম করে বিবাহ হয় নজির মিয়ার। 


বিবাহের কয়েক দিন পরেই নজির মিয়া আবারো বিদেশে পাড়ি জমান। ঠিক একবছর পর তাদের ঘরে একটা কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। গায়ের রং কালো বলে তার নাম রাখা হয় কাজল রেখা । 

এমনিতে নজির মিয়ার গায়ের রং সাদা এবং ফুলবানুও তেমনি। কিন্তু মেয়েটা কালো হলো কেনো এই নিয়ে বেশ কানাকানি শুরু হয় ।

বিবাহের কয়েক দিন পরেই স্বামী বিদেশে গেছেন, তাহলে এই সন্তান কিভাবে জন্ম নিয়েছে? এই নিয়েও গায়ের মানুষের কানাকানির শেষ নেই ।


যখন কাজল রেখার বয়স সবে ১ বছর পূর্ন হলো ঠিক তখনই নজির মিয়া দেশে ফিরেন । কালো বলে তার কন্যা কে এতটুকুও আদর কম করেননি তিনি। মেয়েরা নাকি বাবার রাজকন্যা হয় , সে দেখতে যেমনি হোক  বাবার কাছে কাজল রেখাও রাজকন্যা। 


কিন্তু কাজল রেখার মা ফুলবানুর বিষয়টি উল্টো । কাজল রেখার সেই ৫ মাস বয়স থেকেই কাজল রেখাকে ওর দাদির কাছে ঘুমাতে দিতো। দু একদিন জোর করে ফুলবানুর ঘরে  রেখে আসলেও ঠিক মাঝরাতে কান্নায় পুরো বাড়ি তুলে ফেলতো বাচ্চা কাজল রেখা।

কিন্তু দাদির কাছে কাজল রেখা আরামে ঘুমাতো ।


দেশে ফিরে নজির মিয়া একদিন তার বোনের বাড়িতে যায় তাদের দাওয়াত দিতে। রাত হওয়াতে তার বোন আসতে দিতে চাচ্ছিলো না। কিন্তু নজির মিয়ার এককথা ,  যত রাতই হোক বাড়িতে সে ফিরবেই।


মাঝরাতে বাড়িতে ঢুকে নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন তিনি। এতরাতেও ঘরে আলো জ্বলছে। নজির মিয়া ধীরে ধীরে দরজার সামনে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখেন   তার স্ত্রী অন্য একটা পুরুষের সাথে যৌ*ন সঙ্গম করছে ।


নজির মিয়ার মাথায় যেনো পুরো আকাশটা ভেঙ্গে পড়লো। এটা তিনি কী দেখলেন? যাকে এত ভালোবাসি, এতো বিশ্বাস করি , সেই এভাবে ঠকাচ্ছে আমায় ।


নজির মিয়া দরজার সামনে ধপ করে বসে পরলেন। তার পুরো শরীরটা কাঁপছে। চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে জমিনে পরে। কী করবে বুঝে উঠতে না পেরে সোজা রান্না ঘরের দিকে যায়। সেখান থেকে বটি দা টা হাতে নেন তিনি। গতকালই ধার করে আনা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত ব্যবহার হয়নি।

নজির মিয়া দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে ফুলবানু আর তার ফুফাতো ভাই জব্বার কে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দেয়। ফুলবানু অনেক কাকুতি মিনতি করেই নজির মিয়ার হাত থেকে রেহাই পায়নি।


চিল্লাচিল্লির আওয়াজে পুরো এলাকা বাসী জড়ো হয় নজির মিয়ার বাড়ির উঠানে।

ফুলবানু ও জব্বারের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে। তার পাশেই মাথায় হাত রেখে বসে আছেন নজির মিয়া। গায়ে তার রক্ত মাখা ফুল হাতার শার্ট।


অবুঝ কাজল রেখা তখনও ঘুমাচ্ছিল। একটু পরেই থানা থেকে দারোগা এসে ধরে নিয়ে যায় নজির মিয়া কে।  শেষ বারের মত কাজল রেখাকে একবার কোলে নিয়ে আদর করে দেন, কপালে বড় করে চুমু এঁকে দেন।শার্টের হাতায় চোখ মুছতে মুছতে শেষ বিদায় দেন তার রাজকন্যাকে ।

জোড়া হত্যার দায়ে ফাঁসি হয় তার ।


কাজল রেখার এসব কিছুই মনে নেই। তবে মাঝে মাঝে তার বাবার মুখটা আবছা হয়ে ভেসে উঠে তার চোখের সামনে। কিন্তু মুখটা ঠিক মনে করতে পারে না সে।


সেদিন থেকেই কাজল রেখা তার দাদীর কাছে বড় হয়। দাদী জয়তুন্নেছা কাজল রেখাকে অনেক ভালোবাসতেন ‌।

কিন্তু এই ভালোবাসা কাজল রেখার ভাগ্যে বেশিদিন টিকলো না। যখন কাজল রেখার বয়স সবে ১২ পেরিয়েছে ঠিক সেই সময় জয়তুন্নেছা হঠাৎ কলপাড়ে পরে মাথা ফেটে মারা যান ।

সেইদিন কাজল রেখা বুঝতে পারে আপন মানুষ হাড়ানোর দূঃখ কাকে বলে।


তারপর থেকে ছোট কাকার ঘরে মানুষ হয় কাজল রেখা। কাকা কাজল রেখাকে অনেক ভালোবাসতো , তাদের সন্তান নেই যে তাই ।


এই ভালোবাসাটাও যে কাজল রেখার ভাগ্যে ছিলো না। কাকা একদিন রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। কাজল রেখা বুঝতে পারে তার ভাগ্যে হয়তো সুখ বলতে যেই জিনিসটা,সেটাই নাই ।


সেদিনের পর থেকেই কাজল রেখার কাকির চরিত্র পাল্টে যায়। নিজের বাড়িতে থেকেও চাকরের কাজ করতে হতো কাজল রেখার। একবেলা কাজ কম হলে সেই বেলা ভাত জুটতো না তার কপালে।

কতরাত যে সে না খেয়ে কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে সেটা তার ছেড়া বালিশ ও কাঁথাটা  বলতে পারবে ।


কাকি প্রতিদিন নতুন নতুন পরপুরুষ নিয়ে বাড়িতে আসতো। তাদের সাথে রাত কাটাতো, কাজল রেখা দেখেও না দেখার ভান করে থাকতো।

সেদিন একটা লোক এসে তো সরাসরি কাজল রেখার উরনা ধরে ফেলেছিলো। কাজল রেখা কান্না করতে করতে শেষ।


তারপর একদিন হঠাৎ করেই কাকি কাজল রেখাকে গিয়ে বলে __


কাকি__ কইরে কাজল রেখা , আজকে তোর বিয়ে। যা  ঘরে গিয়ে দেখ আমার পুরোনো বিয়ের কাপড় আছে ঐগুলা পইরা আই ।

কাজল রেখা অবাক দৃষ্টিতে তার কাকির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলার সাহস নেই যে তার , কারন অনেক দিন মার খেয়েছে। এখনো পিঠে পুড়া খুন্তির ছ্যাঁকায় জখম হয়ে আছে। একটু রান্নায় লবণ কম হওয়ার জন্য এই শাস্তি পেয়েছে মেয়েটা।


কাজল রেখা বউ সেজে নিজের ঘরে বসে আছে। কিছু লোককে বাড়িতে ঢুকতে দেখে সে আড়ালে লুকিয়ে কাকি এবং তাদের কথা শুনে ।


পাশের গ্রামের বুড়ো রহিম ব্যাপারির সাথে তার বিয়ে। বুড়োর আগের তিনটা বউ আছে ।

কাজল রেখার চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়। তখনই সে গোয়াল ঘর থেকে রশিটা বের করে রওনা দেয় জঙ্গলের দিকে। উদ্দেশ্যে আত্মহত্যা করবে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর জোনাকির আলো তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বাঁচার ইচ্ছে যে তার শেষ হয়ে গেছে । পৃথিবীতে তার দাম নেই ভেবেই চোখ অশ্রু সিক্ত হচ্ছে বার বার।


সামনে একটা বড় বটগাছ, সেখানে লোকজন কম যায়। লোকমুখে শোনা যায় সেখানে নাকি খারাপ ভুত প্রেত থাকে। সুযোগ পেলেই নাকি মানুষের ঘার মটকে দেয় ‌। 

সেটা শুধু রূপকথার গল্পে হয় বাস্তব বড় কঠিন।

 কাজল রেখা ভাবে ঐ গাছের ডালেই ফাঁসি নিবে সে।


গাছের কাছে যেতেই বিকট আওয়াজে বাজ পড়ে আর সাথে চোখ ঝলকানো আলো। কাজল রেখা দেখতে পায় তার সামনে একটা সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে।


_কে আপনি??


চলবে ____

About the author

Fahim Ahmed
Tech Blogger.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন