প্রতিশোধ
#২য়_পর্ব #ভূতুরে_গপ্পোরাইটার: মেঘাদ্রিতা_মেঘা
সুইসাইড নোটে লিখা ছিলো "আমার মৃত্যুর জন্য মেঘা দায়ী"
লিখাটা পড়ে আমি কিছু বলতে যাবো ,আর তখনই সে আমার মুখ টা তার হাত দিয়ে আটকে ধরে বলে চুপ!কোন কথা বলোনা।
প্রতিশোধ, ২য় পর্ব | ভূতুরে গপ্পো |
কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।সব কথা পরে হবে।
এই কথা বলে মানুষ টা কাগজ টাকে নিজের পকেটে আবার রেখে দিলো।এই মানুষ টা কে জানেন?
এই মানুষ টা আর কেউ না,অধরারই ভালবাসার মানুষ।যাকে কিনা অধরা ওর জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসতো আবির ভাইয়াকে।আবির ভাইয়াও অধরাকে খুব ভালবাসে।
দুজনের প্রায় ১ বছরের রিলেশন।যদিও মেয়েটা সব সময় বলতো আমরা কিন্তু এক বাসায়ই বিয়ে করবো।যেই বাসায় দুই ছেলে আছে সেই বাসায় বিয়ে করবো।কিন্তু ভালবাসা এমন একটা জিনিস, কখন কার প্রতি হয়ে যায় বলা যায়না।
আবির ভাইয়া বাড়ীর এক মাত্র ছেলে হওয়া সত্বেও অধরা তার প্রেমে পড়ে যায়।
আর আমাকে বলে,দোস্ত কি করবো বল,জানি যে আবির বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান।
কিন্তু আমি যে ভালবেসে ফেলেছি ওকে।
সমস্যা নেই সতীন বানাবোনে তোকে।
তাহলেই তো এক সাথে থাকতে পারবো।
এই বলে হেসে দিতো মেয়েটা।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি আবির ভাইয়ার দিকে।
আর ভাবছি,সুইসাইড নোটে আমার নাম কেন লিখা?
ও আমার নাম কেন লিখবে?
অধরার আব্বু আম্মু আর বাকি সবাই কান্নাকাটি করছে,সাথে আবির ভাইয়াও।
আত্মীয় স্বজন যারা যারা আসতে পেরেছে দেখে নিয়েছে অধরাকে।
অধরার বাবা মা চাননা অধরার ময়নাতদন্ত হোক,কাটাছেঁড়া করা হোক তাদের মেয়েকে।
পুলিশি ঝামেলাও চান না তারা।
রাতেই অধরাকে দাফন করা হয়।
আমি আংকেল আন্টিকে খুব করে বলেছিলাম,ময়নাতদন্ত করতে।
কিন্তু তারা করবেন না।
তাদের ভাষ্যমতে, যে যাবার সে তো চলেই গিয়েছে,যা কিছুই করা হোক আর তো ফিরে আসবেনা।তাই তারা রাতেই অধরাকে কবরস্থ করেন।
অধরাকে বাসা থেকে নিয়ে যাবার পরই আম্মু আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।
আমি পাগলের মত চিৎকার করতে থাকি।
আম্মু আমাকে বুঝায়,কিন্তু আমার মন তো মানেনা।
একেতো নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের রহস্যজনক মৃত্যু।
তার উপর তার সুইসাইড নোটে আবার আমার ই নাম লিখা।
আমি নাকি ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী।কিভাবে আমি এসব মেনে নিবো?
সারাটা রাত আমি ছটফট করতে থাকি।
সকাল হলে আম্মু আমাকে ডেকে বলে,মারে সারা রাত কিছুই তো খাস নি।
যা হয়েছে তাতো মেনে নিতে হবে।
তুই একটু স্বাভাবিক হ।
চল কিছু খাবি।
আমি আম্মুকে বলি,
খেতে ইচ্ছে করছেনা আমার আম্মু।
যখন ইচ্ছে করবে খাবোনে।
আম্মুও আমাকে আর জোর করেনা।কারণ সে জানে আমার কি মনের অবস্থা এখন।
সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো।
হঠাৎ আমার মনে হলো,আবির ভাইয়াকে কল দেই।
অধরা প্রায়ই আমার ফোন থেকে কল দিয়ে আবির ভাইয়ার সাথে কথা বলতো,তাই আমার কাছে তার নাম্বারও আছে।
আমি আবির ভাইয়াকে কল দিলাম,আবির ভাইয়া ফোন রিসিভ করলো।
বেচারারও কন্ঠ পুরো ভেঙে গেছে।
অনেক কান্না করেছে অধরার জন্য।
_আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আচ্ছা মেঘা,সত্যি করে বলোতো কি হয়েছিলো তোমাদের মধ্যে?
যার জন্য অধরা এত বড় স্টেপ নিলো?
তুমি জানোনা অধরা আমার কি?
আমার একটা মুহূর্ত বাঁচতে ইচ্ছে করছেনা বিশ্বাস করবা তুমি?
কি এমন হয়েছে তোমাদের, কিসের জন্য ওকে দুনিয়া ছাড়তে হলো বলোতো?
_ভাইয়া আপনি বিশ্বাস করেন অধরার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী?
_দেখো মেঘা,কেউ তো মরার আগে মিথ্যে লিখে যাবেনা।
প্লিজ বলো,কি এমন করেছো তুমি যার জন্য ওকে মরণ কে বরণ করতে হলো?
আমি কাঁদতে কাঁদতে আবির ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া বিশ্বাস করেন আমাদের মধ্যে কিচ্ছু হয়নি।
ওর মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও আমাদের দেখা হয়েছে,কথা হয়েছে।
আমি বুঝলাম না ও কিসের জন্য সুইসাইড করলো।
আর কিসের জন্য সুইসাইড নোটে আমার নাম উল্লেখ করলো।
_সত্যিই কিছু হয়নি তোমাদের মাঝে?
_না ভাইয়া।
আচ্ছা ভাইয়া,আপনি কেন আমাকে তখন কিছু বলতে দিলেন না?
কেন আমার মুখ আটকে ধরলেন?
_কারণ সুইসাইড নোট টা শুধু আমি দেখেছি,আমি পেয়েছি।
আমি চাইনি এই নোট টার কথা আর কেউ জানুক।
আর আমার সত্যি টা জানার দরকার ছিলো তোমার থেকে।কি হয়েছিলো আসলে।
তাছাড়া আমি অধরাকে পাগলের মত ভালবাসলেও চাইনা তোমার মায়ের বুক খালি হোক।তাই তোমাকে চুপ করতে বলেছিলাম।
যে যাবার সে তো চলেই গেছে।
চাইলেও তো আর ফিরে আসবেনা।
যদি তোমাকে শাস্তি দেয়ার পর ও ফিরে আসতো,তাহলে আমি তোমার শাস্তির ব্যবস্থা ঠিকই করতাম।
যাইহোক পরে কথা বলবো আবার।
আমার ভালো লাগছেনা কিছু।
আমার অধরা আর নেই,আমি এটা মানতেই পারছিনা।
আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
আবির ভাইয়া এই কথা বলে লাইন টা কেটে দেয়।
আমার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে,কেন অধরা এমন করলো?
কি হয়েছিলো ওর।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেন কান্না করছিলো।
আর কেনই বা আমার নাম লিখে গেলো।
সন্ধ্যা বেলা আমি আম্মুকে নিয়ে অধরাদের বাসায় গেলাম।
আন্টি আমাকে দেখে হাউমাউ করে কান্না করে ফেল্লো।
আমিও আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।
_মারে কি জন্য করলো এমন,
কিসের জন্য করলো কিছু জানো তুমি?
_আমি নিজেও জানিনা আন্টি।
ও আমাকে কিচ্ছু বলেনি আন্টি।
ওর সাথে আমার গত কালও কত কথা হলো,কিন্তু কিছু তো বুঝতে পারলাম না।
আর ও নিজেও আমাকে কিছু বলেনি।
_আবির কে জিজ্ঞেস করলাম,আবিরও বল্লো কিছু হয়নি ওর সাথে।
অধরা কিছু দিন আগেই আমাকে আবিরের কথা জানায়।
ও নাকি একটা ছেলেকে খুব ভালবাসে।
জিজ্ঞেস করলাম,কে সে?
উত্তর দিলো ওর নাম আবির।
ও পড়াশোনার পাশাপাশি একটা জব করে।
আমি ওকে বললাম,তোর পছন্দই আমাদের পছন্দ।
পড়ালেখা শেষ কর,আমরা তোকে ওর সাথেই ধুমধাম করে বিয়ে দিবো।
কিন্তু ভুলেও কোন ভুলভাল ডিসিশন নিস না কিন্তু।
অধরা হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।
আমি আরো একদিন আবিরকে আমাদের বাসায়ও নিয়ে আসতে বলেছিলাম।
অধরা তাই আবিরকে একদিন বাসায়ও নিয়ে আসে।
আমি আবিরের সাথে কথা বলে দেখি,ছেলেটা ভালোই।
তাই আমার আর কোন আপত্তি ছিলোনা।
ছেলেটাও জানেনা কিসের জন্য অধরা এমন করলো।
এসেছিলো ও তুমি আমার কিছুক্ষণ আগে।
অল্প কিছু ক্ষণ থেকে চলে গেছে।
ওর মুখের দিকেও তাকানো যায়না।
খুব ভেঙে পড়েছে।
মেয়েটা কেন যে এত গুলো মানুষ কে এভাবে আঘাত করে চলে গেলো।
আন্টি আবারো হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
আমি আন্টিকে শান্তনা আর কি দিবো,নিজেও কাঁদতে লাগলাম।
দেখতে দেখতে সপ্তাহ খানিক কেটে গেলো।
কোন ভাবেই অধরার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হলোনা।
আমি না পারি ঠিক মত খেতে না পারি ঘুমাতে,আর না যাই কলেজে।
আমার নিজের জীবন টাই যেন থেমে গিয়েছে।
আর আমাকে একটা প্রশ্নই বার বার কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে,
অধরা সুইসাইড নোটে আমার নাম কেন লিখে গেলো।
অনেক দিন হয়ে গেছে কলেজে যাইনা,তাই কলেজ থেকে এক বান্ধবী ফোন দেয়,কিছু দিন পর আমাদের নাকি পরীক্ষা।
তাই কলেজে যেতে।
আম্মুকে বলে আমিও রেডি হয়ে কলেজে যাই।
আর রাস্তায় বের হয়ে আবির ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলি সে যেন কলেজে আসে।
আবির ভাইয়া উত্তর দেয় সে নাকি কলেজেই আছে।
আমি কলেজে ঢুকতেই দেখি আবির ভাইয়া মেইন গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে,
আমি তার সামনে গিয়ে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ব্যাগ থেকে বের করে এগিয়ে দিয়ে বলি,
বিয়ে করবেন আমাকে?
#time4break👻
আমি কলেজে ঢুকতেই দেখি আবির ভাইয়া মেইন গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে,
আমি তার সামনে গিয়ে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ব্যাগ থেকে বের করে এগিয়ে দিয়ে বলি,
বিয়ে করবেন আমাকে?
আবির ভাইয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম,
কি হলো?
শোনেন নি কি বলেছি?
বিয়ে করবেন আমাকে?
আবির ভাইয়া ফুল টা হাতে নিয়ে উত্তর দিলো হুম করবো।
সেদিন থেকে শুরু হলো আমাদের প্রেম।
নতুন নতুন প্রেম আমাদের,
দুজন যেন দুজনকে ছাড়া বাঁচবোনা।
এতটা গভীর প্রেম আমাদের।
আমি প্রতিদিন ক্লাস শেষে কলেজে অপেক্ষা করি আবির কখন আসবে,
আবিরও লেইট করেনা।
ও আসলে আমরা দুজন মিলে গল্প করি,ঘুরিফিরি খাই দাই।
তারপর আবার যে যার মত বাসায় চলে যাই।
আজ আবির আমার আগেই চলে এসেছে।
_বাহ আজ এত তাড়াতাড়ি।
চাঁদ আজ কোন দিকে উঠেছে?
_সব সময় যেই দিকে উঠে সেই দিকেই।
_ওহ আচ্ছা।
_মেঘা!
_হুম বলো।
_বিয়ে করবে আমাকে?
_হুম করবো তো।
_আমার পরিবার কি নিয়ে আসবো তোমার বাসায়?
_তুমি কি সিরিয়াস?
_হুম একদম।
_ওকে আমি বাসায় গিয়ে বলি আম্মুকে।
তারপর নিয়ে এসো।
_আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি মেঘা।
_আমিও।
আমি বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলি,আবিরের পরিবার আসবে আমাদের বাসায়,আমাদের বিয়ের কথা বার্তা বলতে।
আমি কি আসতে বলবো?
আম্মু আমার দিকে অবাক নজরে তাকায়।
আর মাত্রই কিছু বলতে যাবে,
আমি আম্মুকে থামিয়ে দিয়ে বলি,
আমি আবিরকেই বিয়ে করবো।
আম্মু আর কিছু বলেনা।
আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে আবিরের বাসার লোকজনকে আসতে বলে।
আমি আবিরকে জানিয়ে দেই আসার কথা।
আবির আবিরের পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসে।
দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের একটা বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়ে যায়।
আমরা দুজনই খুব খুশি।
পরের দিন সকালে আমি অধরাদের বাসায় যাই।
গিয়ে আন্টিকে বলি আমার আর আবিরের কথা।
আর বলি,অধরা চাইতো আমরা দুজন যেন একই বাড়ীর বউ হই।
ও তো আর নেই..
কথা টা বলে আমি কান্না করে দেই।
আন্টিও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
আর দোয়া করে সুখী যেন হই।
আমিও বিয়ের জন্য দাওয়াত দিয়ে আসি।
আজ আমাদের হলুদ সন্ধ্যা।
বিয়ের কেনাকাটা সব আমরা দুজনই করেছি।
আমি সব কিছুই অধরার পছন্দে করেছি।
আবির ফোন দিয়েছে।
_এই তো অল্প কিছু ক্ষণ পরই আমাদের হলুদ,আর তারপরই আমাদের বিয়ে ভাবতেই কেমন খুশি যে লাগছে।
বলে বুঝাতে পারবোনা জানো।
_হুম সেইম।
কিন্তু অধরার কথা কি মনে পড়ছেনা একটুও?
আবির চুপ হয়ে যায়।
_তা কি আর বলা লাগে।
_যাক মন খারাপ করোনা।
অধরা নেই তো কি হয়েছে,অধরার আত্মা তো আছে,এই যে আমিই তো ওর আত্মা।
_হুম সেই জন্যই তো বেশি খুশি।
_আচ্ছা রেডি হবো আমি।
মেয়েদের সাজতে কত টাইম লাগে তা তো জানোই।
_আচ্ছা সাজো।
খুব সুন্দর করে সাজো।
আমি যেন অন্য দিকে আর চোখ না ফেরাতে পারি।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি সেজে রেডি হই।
আবির রাও চলে আসে আমাদের বাসায়।
দুই পক্ষের হলুদ এক সাথে হয়।
সবাই খুব আনন্দ করে,
_তুমি জানো আজ তোমাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে?
_হুম জানি।
_কিভাবে জানো?
_কারণ আজ অধরার পছন্দ মত সাজ দিয়েছি যে তাই।
_সত্যিই চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছেনা জানো।
_হয়েছে হয়েছে,বুঝেছি।
এত প্রশংসা করতে হবেনা।
_চলো মানুষ জন দেখছে।
আজ বাদে কাল আমার বউ হবে,এখন দেখলে কি সমস্যা?
_আগে তো হই,
এখনো বিয়ে হতে অনেক বাকি।
এর মধ্যে কত কিছুই তো হয়ে যেতে পারে।
বিয়েও তো ভেঙে যেতে পারে।
_কি যে বলোনা তুমি।
এসব আবোল তাবোল একদম বলবানা।
আমি তোমায় অনেক ভালবাসি।
_হুম বুঝলাম।
হলুদ দেয়া শেষ সবার।
তাই আমরা সবাই মিলে গান প্লে করে ছাদে নাচানাচি করি।
সবাই নাচ গানে এত টাই মগ্ন ছিলো যে এক পর্যায়ে নাচতে নাচতে আবির পা পিছলে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়।
আর আমি একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠি,
আবিইইইইইইর..
চলবে?