![]() |
বহুরুপী পর্বঃ ১ , ভূতুরে গপ্পো
গল্প:-বহুরুপী
পর্বঃ ১
যুবতী একটা মেয়ে পানিতে ডুব দেবার সাথে সাথেই একটা কালো কুচকুচে সাপ তার কোমর থেকে বুক অবদি প্যাচিয়ে নিল। সাপের মাথাটা তুরেছার ভিজে যাওয়া টান টান বুকের সাথে মিশে আছে। কুচকুচে কালো সাপটা ল্যাজ দিয়ে মানুষের হাতের মতো স্পর্শ করছে যুবতী মেয়ের বিশেষ অঙ্গগুলো।
.
তুরেছা সহ বেশ কয়েকজন যুবতী মেয়ে মরা নদীতে গোসল করতে এসেছে। নদগাও মূলত একটা নদীর চর, গ্রামের মাঝখানে নদী থেকে আলাদা হয়ে বিলের মতো একটা অংশ রয়ে গেছে। তাই গ্রামের মানুষ এটাকে মরা নদী ডাকে। তুরছা ওর মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। মামাতো বোন সহ পাড়ার বেশকিছু যুবতী মেয়েরা মিলে নদীতে নেমে সাঁতার কাটছে, হৈহল্লা করছে। মরা নদীতে তারা প্রায়ই গোসল করে, তবে নিয়মিত গোসল করে নদগায়ের পুরুষেরা। সারাক্ষণ এই নদীতে জেলেরা মাছ ধরে, রাত হলে মাঝিরা গান গায়। সবার খুব চেনাজানা পরিচিত একটা নদী।
.
তুরেছা নিজের শরীরে সাপ দেখে চিৎকার দিতে দিতে কিনারায় এসে অজ্ঞান হয়ে যায়। অন্যন্য মেয়েদের খানিক্ষণ সময় লাগলো বিষয়টা বুঝতে। যখন সবাই দেখতে পেল তুরেছার শরীরে একটা সাপ অস্থির হয়ে সর্বাঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন সবাই চিৎকার শুরু করল। তুরেছা তখনও অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে, সাপটা ধীরে ধীরে কাপড়ের ভেতর ঢোকে গেল, ল্যাজ আর মুখ দিয়ে সারাটা শরীর স্পর্শ করছে৷ উপস্থিত যুবতী মেয়েরা সাপ সাপ রব তুলে চিৎকার করে যাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে তুরেছার মামাতো বোন মীরাও অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে৷ ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ লাঠিঝাটা নিয়ে জড়ো হয়েছে তুরেছার চারপাশে। সাপটা তুরেছার কাপড়ের ভেতরে মিশে থাকায় কেউ মারার জন্য বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। তুরেছার মামা ওয়াব উদ্দিন একটা লাঠি দিয়ে ধীরে ধীরে সাপকে নাড়া দিলেন, সাপটা তুরেছার বুকের দিকে মাথা বের করে তাকাল। সাথে সাথে উপস্থিত সবাই ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেছে । ওয়াব উদ্দিন সাহেব সাহস করে লাঠি দিয়ে নাড়া দিতে দিতে "যাহ হিসসস যাহ" শব্দ করছেন। হঠাৎ করে সবাই আবিষ্কার করলো সাপটা আর তুরেছার শরীরে নেই। উপস্থিত সবাই দারুণ অবাক হল, সাপটা সবার চোখের সামন থেকে কিভাবে উধাও হল! শরীর থেকে বের হয়ে যেতে কেউ দেখেনি। ওয়াব উদ্দিন সাহেব সহ বেশ কয়েজন মহিলা তুরেছার কাছে গিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে ধাক্কা দিলেন। খানিক্ষণ পর তুরেছা চোখ মেলে বড় বড় করে চারদিকে তাকাচ্ছে৷ কিন্তু সবার কাছে অদ্ভুত লাগছে একটা সাপ এতক্ষণ থাকার পরেও মেয়েটাকে কামড় দিলো না! সাপ তাহলে কি করল মেয়েটার সাথে ?
.
তুরেছার সারাদিন যাচ্ছে ভয়ে, বিছানার এককোণে গুটিশুটি খেয়ে শুধু বিড়বিড় করে সাপ সাপ করছে। সারাক্ষণ পাশে বসে সাহস দিচ্ছেন নানী - মামীরা। মামাতো বোনরা সবার গালি শুনে মন খারাপ করে বসে আছে। তুরেছার বাড়িতে খবর দিতে সবাই সংকোচবোধ করছেন, খবর না দিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হলেই সবাই বাঁচেন।
.
ঘরের দরজার সিটকানিতে কে জানি অনেক্ষণ ধরে নাড়াচ্ছে। ফকির হবে মনে করে কেউ প্রথমে যায়নি। কিন্তু সিটকানি নাড়ানোর বিরক্তিকর আওয়াজে তুরেছার মামী ওঠে গেলেন। একজন বৃদ্ধ লোক দাড়িয়ে আছে।
- 'কি চান এখানে ?'
- 'মা চারটা ভাত দিবেন, পোলাপান বিয়ে করে বউ নিয়া আলাদা হইয়া গেছে। খাওন - দাওন দেয়না, তাই রাগ করে কাজ - কামের লাইগা বাহির হইছি৷ এখন খুব ক্ষিধে লাগছে। চারটা ভাত দেন মা, খাওয়া - দাওয়া করে কোনো কাজ থাকলে করে দিয়ে যাবোনে। আপনাগো কাজের লোক লাগলেও আমারে রাখতে পারেন। শুধু থাকা খাওন দিলেই হবে মা।'
- ভদ্র মাহিলা খানিক ভাবলেন, কাজের লোকের অবশ্য দরকার। আর এই লোকটি বলছে শুধু থাকা - খাওয়া দিলেই হবে৷ তাই আবার ঘরে গিয়ে স্বামী ওয়াব উদ্দিনকে জানালেন।
ওয়াব উদ্দিন সাহেবের কেন জানি লোকটিকে সুবিধার মনে হচ্ছে না, তিনি কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে বিদায় করতে চাইলেন। টাকা দেবার সময় লোকটির চোখের দিকে তাকানো যায়নি। ভয়ংকর বিকৃত চেহারা মনে হয়েছে৷
.
রাত প্রায় সাড়ে দশটা, তখনও তুরেছা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় নি। তারপরও সবার চেষ্টায় তাকে নিয়ে খেতে বসেছেন। হঠাৎ করে তুরেছা লক্ষ করলো তার কোলে একটা সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে বসে আছে, সে সাপ সাপ বলে চেচিয়ে চেয়ার থেকে উঠলো। ওয়াব উদ্দিন টেবিলের নীচে তাকিয়ে দেখলেন একটা কালো বিড়াল মেউ মেউ করছে। সবাই তুরেছাকে বিড়ালটা দেখিয়ে স্বাভাবিক করে আবার খেতে বসালেন। আশ্চর্য ব্যাপার বিড়ালটা আবার তুরেছার কোলে উঠে বসে আছে সে টেরও পায়নি। আবার চেচিয়ে উঠলো। হঠাৎ তখন নানির খেয়াল হল এই কালো বিড়াল আর কোনোদিন তারা দেখেননি। এটা হঠাৎ কই থেকে উদয় হল ? তাছাড়া কালো বিড়ালের চেহারা খারাপ জ্বীন ধারণ করে বলে তিনি শুনেছেন। এদেরকে দেখলেই তাড়িয়ে দেবার আদেশ আছে ধর্মে। তিনি ওয়াব উদ্দিনকে বললেন, এই বিড়ালকে যতদূর সম্ভব তাড়িয়ে দিয়ে আয়। ওয়াব উদ্দিনেরও মেজাজ গেল বিগড়ে, সে লাঠি হাতে বিড়ালকে তাড়া করে একেবারে নদীর পাড়ের দিকে দিয়ে এসেছে। দু'একটা লাঠি আঘাত অবশ্য বেড়ালের গায়ে লেগেছে, তাঁর ধারণা বিড়াল ল্যাংড়া হয়ে গেছে।
.
রাতের খাবার শেষ করে সবাই যার যার রুমে চলে গেছেন। তুরেছা মামার বাড়ি এলে মামাতো বোনদের সাথে ঘুমায়। তাদের অর্ধেক রাত কেটে যায় হাসাহাসি মাতামাতি করে। আজকে নানি বললেন তুরেছা আমার সাথে থাকবে। এতো বড় অঘটনের পর আলাদা দিতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না।
.
রাত প্রায় সাড়ে বারোটা, হঠাৎ করে তুরেছার ঘুম ভেঙে গেল। সে তাকিয়ে দেখল সোজা তার চোখের উপরে আরও দু'টা চোখ। খানিক্ষণ পরে সে পুরো ঘটনা বুঝে গেল। একটা যুবক তার সমস্ত শরীরের কাপড় খোলে সঙ্গম করছে, দুই হাত দিয়ে খেলা করছে তার স্তন নিয়ে৷ স্পষ্ট এখন শোনা যাচ্ছে যুবকের গোঙানি, হয়তো গোঙানি শুনেই তার ঘুম ভেঙেছে । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে পাশে ঘুমন্ত নানি কিছুই বুঝতে পারছেন না। হঠাৎ তুরেছা দারুণ অবাক হল! সে এতক্ষণে একটা বড়সড় চিৎকার দেবার কথা, চিৎকার দিয়ে পাশ থেকে কম্বল দিয়ে নিজের নগ্ন শরীর ডাকার কথা। সে চিৎকার দিচ্ছে না কেন ? সে কি কোনো মায়াজালে বন্দী হয়ে যাচ্ছে ? তুরেছা চিৎকার দিয়ে উঠলো। সাথে সাথে শরীর উপর থেকে নেমে গেল অচেনা - অজানা একটা পুরুষ, কম্বল দিয়ে নিজেকে ডেকে নেয় তুরেছা। কিন্তু চিৎকার শুনে নানির ঘুম থেকে উঠার নাম নেই৷ ওয়াব উদ্দিন হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে মা'র রুমের দিকে এলেন, এসে দেখেন সেই কালো বিড়াল সারা ঘরে লাফালাফি করছে৷ দেখে মনে হচ্ছে অস্থিরতার মধ্য আছে৷ লাফ দিয়ে একবার উঠছে আলনায়, আবার টেবিলে, সেখান থেকে আলমিরায়। মেউ মেউ করে হৈচৈ ফেলে দিছে। বিরক্ত হয়ে ওয়াব উদ্দিন আবার সেই লাঠি হাতে নিয়ে বিড়ালকে ধাওয়া করলেন। কিন্তু একটা বাড়িও বিড়ালের উপরে ফেলা যাচ্ছে না, বিড়াল শুধু মেউ মেউ করে লাফালাফি করছে৷ ওয়াব উদ্দিন বিড়ালের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে ঘেমে গেছেন৷ আচমকা বিড়াল পাশের রুমে চলে গেল, সেখানে বাতি নেই। তিনি লাঠি হাতে নিয়ে সেই রুমে ঢুকলেন। সাথে সাথে ওয়াব উদ্দিনের চিৎকার শুনে বাড়ির সব সদস্য সেদিকে গিয়ে বাতি জ্বেলে অবাক হয়ে গেলেন। ওয়াব উদ্দিন ফ্লোর পড়ে আছে, ঘাড়ের রক্ত ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর, স্ত্রী দাড়িয়ে আছে স্বামীর রক্তের উপর।
চলবে......