সুমন -পর্ব ১, ভূতুরে গপ্পো |
গল্পঃ সুমন
পর্ব_১
লেখক :আকাশ মাহমুদ
.
সুমন নামে আমার এক শৈশব কৈশোর সময়ের বন্ধু আত্মহত্যা করে মারা গেলো । মরার আগে নাম ছিল খড়ি সুমন ( অত্যন্ত শুকনা হওয়ার কারণে ) । মরার পরে নাম বদলে হয়ে গেলো দড়ি সুমন । যাহোক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শুনতে পেলাম সুমন গলায় দড়ি দিয়েছে । বাড়ি থেকে দৌড় দিয়ে যখন ওদের বাড়ির কাছে পৌছালাম দেখলাম সবাই হুড়মুড় করে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে । পেছনে ওর মা "ও বাবা সুমন তুই এ কি কাজ করলি রে" বলে চিৎকার করছে । কষ্ট চেপে রেখে বাড়ি চলে এলাম । তখন রাতে দেরি করে বাড়ির বাইরে থাকা নিষিদ্ধ ছিল আমার জন্য ।
সন্ধ্যায় লাশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সুমন মারা যায় । হাসপাতাল থেকে লাশ পোস্টমার্টাম নিয়ে যাবে । সুমনের মামা লাশ নিয়ে একা বসে ছিল রাত বারোটা পর্যন্ত । পরে তিনি ভয়ে আর সেখানে থাকতে পারেন নাই । সকালে যখন তিনি লাশের কাছে যান তখন দেখেন চার পাঁচটা কুকুর লাশের পা চাটছে ।
সকালে লাশ পোস্টমার্টামে নিয়ে যায় । সকাল দশটার দিকে লাশ নিয়ে আসে । কাছ থেকে সুমনের লাশ দেখলাম । মাথায় বড় বড় সেলাই মোটা সুতা দিয়ে । সেখান থেকে টপটপ তাজা করে রক্ত পরছে । ট্যাম্পু ভরে গেছে রক্তে । ট্যাম্পুর নিচে রক্ত পরছে ফোঁটায় ফোঁটায় । লাশের কাছে কেউ যাচ্ছে না । লাশ ধোঁয়ানোর জন্য মসজিদ থেকে লাশ ধোঁয়ার চৌকিটাও দেয় নাই । পরে একটা ভাঙাচোরা চৌকির ব্যবস্থা করা হলো । অনিচ্ছার হাতে দুইজন মিলে লাশ নামাতে গিয়ে লাশ ফেলে দিলেন । খেজুর পাতার পাটি ছিঁড়ে লাশ পরলো নিচে । সুতা ছিঁড়ে বুকের দুইপাশ খুলে গেলো । দেখলাম বুকের ভেতর পুরোটা ফাঁকা। সবাই কোন রকম পরে লাশ নিয়ে গেলেন চৌকির উপরে । লাশ ধোঁয়ানোর মানুষ নাই । পরে সাবান গোলানো তিন চার বালতি গরম পানি দূর থেকে লাশের গায়ে ছুড়ে মেরে লাশ ধোয়া শেষ হলো । ফেলে দেওয়া ঝুট দিয়ে একজন কোন রকম কিছু জায়গা মুছে দিলেন । তারপর কাফনে জরিয়ে লাশ জানাযা পরানোর জন্য নিয়ে গেলো । আমরা দেখলাম জানাযা পরতে হাতে গোনা আট নয়জন মানুষ এসেছে তার মধ্যেই আমরা বন্ধুরাই চারজন ।
ইমাম সাহেব জানাযা না পড়িয়ে চলে গেলেন । তিনি আত্মহত্যার লাশের জানাযা পড়াবেন না সাফ বলে গেলেন । জানাযা পড়ানো হলো । জানাযা পড়ালেন সুমনের বড় মামা ।
বিশ্বাস করবেন না প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা আমরা চারজন বন্ধু ছাড়া কেউ খাটিয়া কাঁধে নেয় নাই । গোরস্থানে পৌছে দেখলাম, মূল কবরস্থান থেকে দূরে বাঁশঝাড়ের ঝোপের ভেতর কোন রকম একটা কবরের মত খোঁড়া হয়েছে । সেই কবরে কেউ নামতে চাচ্ছে না । কবরের কাছে গিয়ে দেখলাম হয়তো সাত দিন আগে খোড়া কবরের পাশে সুমনের কবর খোঁড়া হয়েছে । কবর খোঁড়ার সময় ঐ কবরের দেয়াল ফুটো হয়ে গেছে । ফুটো দিয়ে হড়হড় করে পাশের কবরের লাশের পঁচা গলা তেল চর্বিতে এই কবর ভরে গেছে । দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যাচ্ছে না । সবাই মাথার টুপি খুলে নাকে ধরেছে । কবরে নামার কেউ নেই এমন কি সুমনের বড় মামা এবং বাবা অসুস্থ হয়ে পরলেন । বমি করতে করতে তাদের এমন অবস্থা যেনো আজকে আর বাড়ি যেতে পারবেন না ।তাদেরও এখানে কবর দিয়ে যেতে হবে । কবরে নামার কেউ নাই ।
আমি বললাম আমি নামবো । আমার এক বন্ধু বললো আমিও নামবো । আমি আমার প্যান্ট গুছাতে লাগলাম ।
সুমনের এক মামাতো ভাই বললেন অবিবাহিত কাউকে কবরে নামা যাবে না । আমি নামছি । তিনি লুঙ্গি গুটিয়ে লাফ দিয়ে সেই পঁচা গলা পানির ভেতর নেমে পরলেন । একাই কোলে তুলে নিলেন লাশ । একা কোলে নেওয়ার সময় হাত ফসকে পুরো লাশ নিচের পানির মধ্যে পরে গেলো । আমার উপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম । পচা পানি ছিটে আমার গায়ে পর্যন্ত পরলো । সুমনের মামা পুরোপুরি ভিজে গেছেন । তিনি উয়াক উয়াক করছেন । কোনরকম লাশ উত্তর দক্ষিণ সোজা করে দিয়ে কাফনের কাপড়ের গিট খুলে উপরে উঠে আসলেন । আমরা এক হাতে নাক আরেক হাতে বাঁশের চাটায় দিয়ে তাড়াতাড়ি কবরের মুখটা ঢেকে দিলাম । এলোপাতাড়ি কোদাল দিয়ে কবরের মত করে গোরস্থান ত্যাগ করালাম ।
বাড়ি আসার আগেই আমি সহ আমার সবগুলো বন্ধু অসুস্থ হয়ে পরলাম । গোসল করেও গায়ের দুর্গন্ধ যায় না । সাবানের পর সাবান ঘষে ঘষে গোসল করলাম সবাই ।
সুমনের কাহিনী যদি এখানেই শেষ হত তবে ভালো হতো তবে কাহিনী এখান থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে তা লিখবো ।
ধন্যবাদ
#চলবে