সুমন ,পর্ব: ৩ | ভূতুরে গপ্পো |
গল্প: সুমন
পর্ব: ৩ (শেষ পার্ট)
লেখক : আকাশ মাহামুদ
(চার +)
সুমন মরার বছরখানেক পরের ঘটনা । আমার এক বন্ধুর কাছে থেকে ঘটনাটি শুনেছিলাম।
বন্ধু রাতে একা থাকে বলে তার এক সিনিয়র ভাতিজা তার সঙ্গে থাকে । ভাতিজার নাম রবি । রবির দোকান আছে যা সে প্রতিদিন রাত এগারোটার দিকে বন্ধ করে এসে বন্ধুর ঘরে এক খাটে ঘুমাই । বন্ধুর মুখে যেভাবে শুনেছি নিচে সেইভাবেই লিখছি ।
আমি শুয়ে ছিলাম । চোখ দুটো একটু ঘুমে বন্ধ হয়ে এসেছে । হঠাৎ রবি চাচা এসে দরজায় নক করে ভেতরে ঢুকলো । তারপর আমার মাথার কাছে এসে বসলো । সারাদিন কি করেছে না করেছে তা নিয়ে গল্প করছি । হঠাৎ আমি দেখলাম রবি চাচার চোখ মুখ পঁচে গলে খসে পরছে । চোখ দুটো বের হয়ে এসেছে কোটর থেকে। কথা বলতে বলতে এমন কেন হবে বলে আমি যখন বিছানা থেকে উঠতে লাগলাম তখন রবি চাচা আমার বুকের উপরে একটা হাত দিলেন । আমি উঠতে পারছি না কথাও বলতে পারছি না । চিৎকারও দিতে পারছি না । আমি দেখলাম যে হাত আমার বুকের উপরে তা কোন স্বাভাবিক মানুষের হাত না । ধীরে ধীরে হাতের চাপ বাড়ছে । এইদিকে রবি চাচার মুখের সব চামড়া মাংস খসে পরেছে এবং এক সময় চেহারা সুমনের চেহারার হয়ে গেছে ।
আমি মনে মনে যখন দোয়া পড়তে লাগলাম তখন ধীরে ধীরে চাপ কমে গেলো এবং এক সময় আমি দেখলাম আমার পাশে কেউ নেই ।
আমি লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে দেখলাম ঘরের দরজার দুইটা কপাট এবং একদম হা হয়ে খোলা । আমি উঠে গিয়ে আমার আব্বা আর আম্মা কে ঘুম থেকে ঢেকে তুললাম । তারা বললেন তুই স্বপ্ন দেখেছিস । এক সময় আমিও ভাবলাম স্বপ্ন দেখেছি ।
ঘরে এসে দেখলাম যেখানে রবি চাচা হাত রেখেছিল সেখানে খুব জ্বালা করছে । টিশার্ট উঁচু করে দেখলাম চামড়ার উপরে পাঁচটি হাতের আঙুল লাল হয়ে ছাপ হয়ে আছে । আর একটা কথা । স্বপ্ন যদি আমি দেখতাম তবে আমি ঘরের দরজায় খিল দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। সেই দরজার দুই কপাট আমি যদি খোলা পেলাম কি করে ?
সেই ঘটনার রাতে রবি চাচা আর আমার কাছে ঘুমাতে আসেনি । সে নাকি সেদিন বিকেলে তার বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।
Related Posts
পরদিন সকালে আমি এবং আমার আরো কয়েকজন বন্ধু আমার ঐ বন্ধুর বুকের উপরে একটা বাম হাতের ছাপ দেখি যা সকালেও ছিল । ঘটনাটা আমাদের সে সেইদিনই বলেছিল যা গত ঘটনায় লেখার কথা আমার মনে ছিল না । এখনও বন্ধুটি আছে । সেই রাতের ঘটনার ভয় এখনও তার মনের ভেতরেই আছে ।
(পাঁচ 🌱)
এইবার আমার কথাই আসি । অনেকেই বলেছেন আপনি ভূত প্রথম কবে দেখেছেন। আমি ভূত দেখি নাই। তবে প্রথম যা দেখেছিলাম, নিচে লিখে দিলাম।
তখন বয়স কম ।
বলা যায় ক্লাস ফাইভ সিক্সে পড়ি । গ্রামে যেহেতু থাকি সেহেতু অন্ধকারকে তেমন ভয় পাই না । ভুতের ভয়কে দাদির গল্প শোনার সময় বাদে অন্য সময় কেয়ার করি না । যা হোক এক সন্ধ্যায় সময় পড়তে বসবো । পড়তে বসার আগে বিকেলের ধুলা পরে যাওয়া শরীরের ধুলা রেখেই শুধু নিয়মিত হাঁটু পর্যন্ত পা ধুয়ে হাতে মুখে একটু পানি ছিটিয়ে পড়তে বসার নিয়ম আমার । রোদে পোড়া চিমসে মারা চেহারা নিয়ে মায়ের ভয়ে ভয়ে হাত মুখ ধুইতে পুকুরপাড়ে নারিকেল গাছের ঘাটে গিয়ে বসেছি । বসতেই শুনলাম একটু দূরে জিল্লুদের বাড়িতে চিৎকার দিয়ে কয়েকজন কেঁদে উঠলো । উঠে দৌড় দিলাম । খোকনদের নারিকেল বাগানের নিচ দিয়ে ঐপাড়ে জিল্লুদের বাড়ি । তখন সন্ধ্যা নামি নামি করছে । সূর্য ঢুবে গেছে তবে বেশ আলো আছে । আমি যখন নারিকেল বাগানের নিচ দিয়ে দ্রুত পায়ে যাচ্ছি তখন দেখলাম একটা সাদা ধোঁয়ার অবয়ব বাতাসে ভেসে আমার সামনে দিয়ে এসে আমার ভেতর দিয়ে ঢুকে পার হয়ে পাশের বড় পুকুরের পানির উপর দিয়ে পানি না ছুঁয়ে কোনা বরাবর হেঁটে হয়ে চলে গেলো । ছোট্ট মস্তিষ্কেও আমি এক মিনিটের জন্য থমকে গেলাম । তারপর জিল্লুদের বাড়িতে গিয়ে জানলাম জিল্লুর নানা মারা গিয়েছেন ।
বিশ্বাস করুন । যে অবয়ব টা আমি দেখেছিলাম সেইটা শুধু ধোঁয়ার একটা অবয়ব ছিল । আমি দীর্ঘদিন ভেবেছি আমি কি দেখেছিলাম । আমি কি তবে আত্না দেখেছিলাম যা কিছুক্ষণ আগে জিল্লুর নানার দেহ ত্যাগ করেছেন । সেই আমার দেখা অশারীরক কিছু প্রথম কিছু । তারপর দিন গেছে । এই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আরো হয়েছি । অনেকেই ভাববেন, আমি গল্পকার। গল্প লিখেছি। কথা সত্যি। আমি গল্পকার কিন্তু মিথ্যাবাদী না।
এই লেখার প্রতিটি লাইন সত্যি। অদৃশ্যকে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। কে জানে হয়তো আপনার অজান্তেই আপনার পাশের বালিশে কেউ মাথা রেখে শুয়ে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।
সুমনের ঘটনা যদি এখানেই শেষ হতো তবে ভালো হতো কিন্তু সুমনের তান্ডব আমাদের এলাকাতে চলে কয়েক মাস।
ধীরে ধীরে তা লিখবো ।
ধন্যবাদ।