![]() |
পরী পর্বঃ ৪ | ভূতুরে গপ্পো |
------ #পরী ------
Part-4
.
জঙ্গলের মধ্যে আমি একা একা হাটছি। ভোর অথবা গোধূলি, আমি ঠিক নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। এখানে আরো একজন আছে, অবশ্য দেখতে পাচ্ছি না তাকে। শুধু টের পাচ্ছি কেউ আছে। আমার খুব কাছে চলে আসছে। চাচ্ছিলাম না কেউ আমার কাছে আসুক। দৌড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু দৌড়াতে পারলাম নাহ। পা দুটো অনেক ভারি মনে হচ্ছিলো, কিছু একটা ধরে রেখেছে। চিৎকার করতে চাচ্ছি কিন্তু কোন শব্দ বের হচ্ছে না। জেগে উঠে দেখলাম জানালা ভেদ করে সাদা আলো আসছে। বৃষ্টি টা ও থেমে গেছে। বাহিরে পাখি কিচিরমিচির করছে। আবির এখনো ঘুমোচ্ছে। খাট থেকে নেমে গিয়ে পর্দা সরিয়ে জানালার পাশে এসে দাড়ালাম, আর স্বপ্নটার কথা ভাবতে লাগলাম। এর আগে অবশ্য এমন স্বপ্ন কখনো দেখিনি।
জানালার পশে দাড়িয়ে বাহিরটা দেখছি। মৃদু একটা হাওয়া এসে গায়ে লাগলো।
পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো। ছোট বেলায় সুপার ম্যান ছবিটা দেখে অনেক উড়তে ইচ্ছে করতো। আম্মু সুপার ম্যান এর চাইল্ড কস্টিউম টা কিনে দিয়েছিলো। আমি কস্টিউম টা পড়ে সুপার ম্যন এর মতো দৌড়ে এসে আম্মুর গালে চুমো দিতাম। আম্মুকে খুব মিস করছি।
খাটের কাছে গিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে আম্মুকে কল দিলাম।
ফোন ধরলো আম্মু।
এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছো। আবির দের ঐখানে কেমন লাগছে?
=ভালো লাগছে আম্মু। একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। জানালায় দাড়িয়ে ভাবছিলাম সুপার ম্যান এর কথা আর তোমাকে ও মিস করছিলাম ভিষন।
মিস ইউ টু মাই সুইট হার্ট। আবিরদের বাসার সবাই কেমন আছেন?
=সবাই ভালো আছে। বাসায় অনেক গেস্ট।
-আচ্ছা তুমি কি কোন গিফট নিয়ে গেছো নাকি আমি ড্রাইভার কে দিয়ে গিফট কিনে পাঠিয়ে দিবো?
=আম্মু আমি আসার সময় গিফট নিয়ে আসছি।
-ভেরি গুড। যাও ফ্রেশ হও। এখন রাখি আম্মু একটু পর অফিসে যাবো। নিজের খেয়াল রেখো, ঠিক মতো খাবার খেয়ো। লাভ ইউ।
=লাভ ইউ টু আম্মু, উমমমমমমাহহহহ।
,
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আবির ঘুম থেকে উঠেছে।
-গুড মরনিং
=বেড মরনিং
কেনো কি হয়েছে?
=বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গছে।
কি স্বপ্ন?
=জঙ্গলের মধ্যে হাটতেছিলাম।
ও আচ্ছা স্বপ্নে কোন মেয়ে আসে নি?
=ধূর মেয়ে নিয়ে স্বপ্ন আমি দেখি না। যা ফ্রেশ হ। আমি ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
-ফোনটা নিয়ে যা নাশতা করার সময় ফোন দিবো নেমে আসিস।
=হুম।
ফোনটা নিয়ে ছাদে উঠে পরলাম, ছাদের দোলনা টা অনেক সুন্দর, আজ সূর্য টাকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে ইনফেক্ট যান্ত্রিক নগরীতে চার দেয়ালের মাঝে এভাবে সূর্য দেখার সময় কই। তবে মাঝে মাঝে চাঁদ দেখি। দোলনার দিকে তাকাতেই মনে পড়লো রিয়ার বলা ঘটনাটির কথা। ছাদের ও পাশ টা তে গিয়ে পুকুরের সেই ঘাট টা দেখি আর ভাবতে থাকি সেই মেয়েটির কথা। এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন আমাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বল্লো ভুও। হঠাৎ ধাক্কা দেয়াতে ভীষণ ভয় পেয়ছিলাম। পিছন ফিরে দেখি আবিরে কাজিন তৃশা।
-ভয় পেয়েছেন?
=কিছুটা।
হা হা হা হা হা করে পেতনির মতে দাত বের করে হাঁসা শুরু করলো। সুন্দর মেয়েরা দাঁত বের করে হাঁসলে যে এতো বাঁজে লাগে তৃশা কে না দেখলে হয়তো কখনো বুঝতেই পারতাম না।
-এই যে মিষ্টার কি ভাবছেন?
=কিছুনা।
-বাদ দেন, এখানে এসে কেমন লাগছে সেইটা বলেন?
=অনেক ভালো লাগছে।
এমন সময় দেখি তমা আর আয়ান আসছে ছাদে। আয়ান হলো তৃশার ছোট ভাই ক্লাস সেভেন এ পড়ে। গতকাল রাতে খাবারের টেবিলে বসে অনেক দুস্টামি করেছিলো। বোনের মতই চটপটে। তমা বল্লো ভাইয়া এতো সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠছেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আবির ভাইয়া বলে আপনি নাকি প্রতিদিন অনেক লেইট করে ঘুম থেকে উঠেন আর অনেক রাত পর্যন্ত বই পড়েন। নিচে চলেন নাশতা করবেন। আমি আপনাকে ডাকতে আসছি। হঠাৎ আয়ান আমার হাতটা ধরে বলে চলো ভাইয়া একসাথে নাশতা করবো।
-আচ্ছা চলো।
অমি ওদের সাথে নিচে নেমে আসলাম।
তৃষা মুখ বাকা করে বিড় বিড় করে বলতেছে ঢং দেখে বাঁচি না যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপরশীর ঘুম নাই।
মনে হয় নতুন জামাই কি আল্লাহদ হু বলে মুখটা আবার বাকা করলো।
,
নাশতা করে আবির ফায়াজকে নিয়ে বের হয়েছে গ্রাম দেখাতে। পথে ফায়াজের সাথে আবিরের ছোট বেলার কয়েকটা বন্ধুর সাথে আবির পরিচয় করিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ ঘুরোঘুরি করার পর তারা বাসায় ফিরে আসে। এদিকে বিয়ের গেইট স্বাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। আবিরের আম্মু আবিরকে ডেকে বল্লো বাজারে গিয়ে ঈলিশ মাছ কিনে নিয়ে আয়। এর আগেও আন্টি অনেকবার বাসা থেকে ঈলিশ মাছ রান্না করে আমার জন্য পাঠিয়ে ছিলো। আবির আমাকে বল্লো তুই যাবি আমার সাথে। সাথে সাথে আন্টি আবিরকে বল্লো, ও একটু আগে বাহির থেকে আসছে আর বাজার অনেক দূরে ওরে নেয়ার দরকার নাই তুই জা ফায়াজ বাসায় থাকুক। আবির আচ্ছা বলে টাকা নিয়ে বাজারে চলে গেলো।
বাড়িটা অনেক সুন্দর করে স্বাজানো হচ্ছে। আন্টি বল্লো তুমি তো মাছ ধরতে চাইছিলা যাও পুকুরে আয়ান,তৃশা,রিয়া মাছ ধরতেছে।
-আচ্ছা আন্টি।
আমি বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পুকুরের দিকে গিয়ে দেখি আয়ান আর রিয়া মাছ ধরছে। তৃশা পুকুরের অন্য পাশের ঘাটলাতে বসে আছে। আয়ান আর রিয়ার কাছে গিয়ে বল্লাম দেখি কে কয়টা মাছ ধরেছো?দেখলাম রিয়ার থেকে ও বেশি মাছ আয়ান ধরেছে। রিয়া বল্লো ভাইয়া আপনি ধরবেন? হে ধরবো তার আগে তোমার তৃশা আপুকে নিয়ে আসি। আমি উঠে গিয়ে পুকুরের ও পাশটাতে গেলাম। তৃশা মুখটা কে কালো করে বসে আছে। পাশে গিয়ে বল্লাম বসতে পারি?
-আপনার ইচ্ছে।
বসার পর বল্লাম বয় ফ্রেন্ড কে মিস করতেছেন?
-আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নাই।
আপনার কি মন খারাপ? পানি খাবেন?
ও মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বল্লো মন খারাপের সাথে পানির কি সম্পর্ক?
এমনিতেই বল্লাম।
-আচ্ছা একটা কথা বলবেন?
কি কথা?
-আমি কি আপনাকে খুব বেশি জ্বালাই।
কই না তো। আপনার এমনটা কেনো মনে হলো?
-জানি না।
মাছ ধরবেন?
-আপনি আমার সাথে মাছ ধরে পারবেন না।
তাই ওকে চলুন দেখা যাক। তবে একটা শর্ত আছে
-কি শর্ত
আমি যদি আপনার থেকে বেশি মাছ ধরি তাহলে আমি যা বলবো আপনাকে তাই করতে হবে। আর আপনি যদি আমার থেকে বেশি ধরেন তাহলে আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।
-আমি রাজি চলেন হাঁসি মুখে তৃশা বল্লো।
.
চলবে..........