ভয় গল্পঃ১ । ভূতুরে গপ্পো

সত্য ঘটনা 💀☠️ সালটা ২০০৩! সে বছর সারা দেশে খুব বন্যা হয়েছিলো। এসএসসি পর হাতে তিন মাস সময়। চিন্তা হলো কম্পিউটার শিখবো। যেই চিন্তা সেই কাজ। সিটিতে মা
ভয় গল্পঃ১, ভূতুরে গপ্পো
ভয় গল্পঃ১ , ভূতুরে গপ্পো

সত্য ঘটনা 💀☠️
সালটা ২০০৩!
সে বছর সারা দেশে খুব বন্যা হয়েছিলো।
এসএসসি পর হাতে তিন মাস সময়। 
চিন্তা হলো কম্পিউটার শিখবো। 
যেই চিন্তা সেই কাজ। সিটিতে মামার বাসায় চলে গেলাম সেখানে এক কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে ৩ মাসের কোর্সে ভতি হলাম। 
এসএসসির রেজাল্টের সময় চলে এলো মামার কাছে জানতে পারলাম আগামীকাল রেজাল্ট দিবে।
বিকেলে খবরটা পেলাম এখনই বাড়িতে যেতে হবে। কালকের স্পেশাল দিনটা বাড়িতে না থাকলে কি হয়। যেই ভাবনা সেই কাজ মাগরিবের আগে রওনা দিলাম।  মামানি মানা করলো বললো সকাল সকাল যেও।  আমারতো আর এক মিনিটও মন টিকছে না।  
শহর থেকে লঞ্চে নদী পাড় হলাম। এখান থেকে ২ টা বেবিটেক্সি পরিবর্তন করে এলাকার বাজারে আসতে হয় সেখান থেকে রিকসা করে গ্রামের কাছাকাছি তারপর ২০ মিনিট হাটতে হয় বাড়িতে পৌছাতে। 
বন্যার সময় ঠিকঠাক জায়গা মত গাড়ি পাবো কি পাবো না সেগুলো মাথায় ছিলো না। বাড়িতে যেতে হবে এটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। লঞ্চ থেকে নেমে প্রথমেই দেখলাম স্টান্ডে গাড়ি নেই অনেক লোক দাড়িয়ে আছে  অনেকে হাটতে শুরু করলো। আমি অপেক্ষা করছি রাত তখন ৮ টা। 
অনেক্ক্ষণ পর ২ টা গাড়ি আসলো। হুরুহুরি করে একটা ফুল আরেকটায় গিয়ে বসতেই ড্রাইভার বল্লো গাড়িতে একটু সমস্যা আছে অপেক্ষা করেন ঠিক করে নেই। কি আর করার অপেক্ষা করছি অন্য গাড়ি আসে কিনা। এক ঘন্টা চলে গেলো কোন গাড়ি নেই। গ্রামের পরিবেশ এমনি সন্ধ্যার পর নিরবতা নেমে আসে। অবশেষে গাড়ি ঠিক হলো।  ড্রাইভার বললো ভাড়া ডাবল তা না হলে যাবো না। রীতিমতো ব্লাকমেইল গ্রাম বলে কথা তার উপরে বন্যার মৌসুম চলছে। উঠে পরলাম।   
স্থানীয় বাজারে এসে নামলাম এখান থেকে আমাদের এলাকার বাজারে যেতে হবে আরেক গাড়িতে।  রাত প্রায় ১০টার কাছাকাছি বাজারের দোকানপাট বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। এসে দেখি আবার সেই প্যারা কোনো গাড়ি নেই। বাজারের পাহারাদার হাটতে হাটতে কাছে আসলো। তারে জিগাইলাম চাচা গাড়ি কি আসবে? উনি বললো না আসার সম্ভাবনা বেশি দেখেন যদি ভাগ্য ভালো হয় আসতে পারে। 
আধাঘন্টা পর গাড়ি একটা আসলো। উঠে পরলাম এখানেও ডাবল ভাড়া। কি আর করা যেতেই হবে। রাস্তার দুই পাশে অথই পানি কোথাও কোথাও রাস্তার উপর দিয়ে পানি অতিবাহিত হচ্ছে কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে রাস্তা ভেঙ্গে যাবে। ৩০ মিনিটের রাস্তা ১ ঘন্টা লাগলো আসতে।  আমাদের স্থানীয় বাজারে এসে নামতেই আসেপাশে অনেক কুকুর ঘ্যাউ ঘ্যাউ শুরু করলো। বাজারে শ্মশান নীরবতা। নাইটগার্ডকে দেখছিনা।হয়তো কোথাও বসে আছে। 
সাথে থাকা আরো ৪ জন ছিলো তিন জন বাজারের পাশেই বাড়ি আর একজন আমার বাড়িতে যাওয়ার আধা রাস্তায় তাদের গ্রাম।  যাক কিছুসময় তো গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। রাত প্রায় ১২ টা। 
বাজারে অনেকগুলো ভিন্নভিন্ন গাড়ির স্ট্যান্ড।  আমাদের এরিয়ার স্ট্যান্ডে আসলাম ভাগ্যগুনে যদি রিকসা পাই। ৯৯% পাবো না।  বড়জোর ৯ টা, তারপরই আর গাড়ি থাকে না। এখনতো ১২ টা বাজে। ঐ লোকের সাথে কথা বলতে বলতে হাটা শুরু করলাম।  বললো চলো দাড়িয়ে না  থেকে হাটতে থাকি রিকসার আসা করে লাভ নেই।  কি আর করার হাটা শুরু করলাম দুজন কথা বলতে বলতে আর উনি সিখারেট খাচ্ছে। ওনার গ্রামের কাছাকাছি চলে আসছি। বললো যেতে পারবা না হলে রাতে আমাদের বাড়িতে থাকো। বললাম সমস্যা নেই যেতে পারবো। উনার বাড়ি আমার ক্লাসমেটের বাড়ির পাশে।  গেলে অবশ্য তাদের বাড়িতে থাকা যেতো।  কিন্তু এতোরাতে যাওয়াটা ঠিক হবে না ভেবে উনাকে বিদায় দিলাম। ওনার কাছে থাকা গ্যাস লাইটটা আমাকে দিয়ে দিলো। বললো সাবধানে যেও 
কাহিনী হপায় শুরু 
আমিতো একা ভয়তো একটু একটু পাচ্ছি। এখনো হেটে যেতে প্রায় ১ ঘন্টার উপরে লাগবে তারউপরে চারদিকে বন্যার পানি থইথই করছে। কাধে স্কুল ব্যাগ হাতে ওনার দেওয়া গ্যাস লাইট। প্যান্ট ভাজ করে আগেই উপরে তুলে নিয়েছি। হাটছি আর ভাবছি আজ যদি ঠিকঠাক বাড়িতে পৌছাতে পারি আর কখনো এমন ভুল করবো না। 
হাতটে হাটতে হঠাৎ মনে হলো  আমি যেখানে আছি হাত বাম পাশেতো কবরস্থান। মনে ভয় ডুকে গেলো।  পুরুটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। আশেপাশে বাড়িঘর আছে ভেবে একটু সাহস হলো। বাড়ির চিপাচাপায় কুকুর ঘ্যাউ করছে শুনা যায়। হয়তো শিয়াল দেখে এমন করছে। 
মেইররোড ধরে হাটতে হাটতে চলে এলাম আমাদের পাশের গ্রামে। গ্রাম টা আমাদের গ্রামের দক্ষিন-পশ্চিমে ।এখান থেকে ২ মিনিট হাটলে ৩ রাস্তার মোড়। বাম দিকে পাকা রাস্তা চলে গেছে বড় গ্রামে আর ডান দিকে একটু নিচু কাচা রাস্তা আমাদের গ্রাম। ৭- ৮ মিনিটের পথ। গ্রামের মাথায় এসে দেখি প্রবল স্রোতে রাস্তায় কালবার্ট ছিলো ভেঙ্গে গেছে। এখন কি করি!  
দাড়িয়ে আছি স্রোত দেখে বোঝার উপায় নাই কতটুকু গভীর বা কতটা স্রোত বইছে।  কি করে পাড় হবো দারিয়ে দারিয়ে ভাবছি।  আশেপাশে কাউকেই দেখছি। এমন কি নৌকা নিয়ে মাছ ধরে এমন কেউই নজরে আসছে না।  অন্ধকার রাত আকাশে মেঘ মেঘ অবস্থা।  হঠাৎ পাশের বাড়ির একজন চাচার কাশির আওয়াজ শুনলাম। হয়তো টয়লেটে যাবে। হাতে লাইট জ্বালাতে জ্বালাতে রাস্তায় এলো। আমার কাছাকাছি আসলো,  দেখে চিনলাম আমাগো এলাকার ঝাউলা। উনি আবার মাছ ধরার ঝাল ফেলছে আশেপাশের জমি গুলোতে। রাত তখন ১টার উপরে। জিজ্ঞেস করলো তোমাগো বাড়ি কোন গ্রাম এতো রাইতে কই থেইক্কা আইছো?  উনাকে সবকিছু বল্লাম। আমারতো নৌকা ছিলো তোমারে দিয়া আইতে পারতাম কিন্তু নৌকাটা বিকালে মেজোজন নিয়া গেছে এহনো আহেনাই।  বল্লাম সমস্যা নাই এই ভাঙা দিয়া যাওয়া যাইবো নাকি আর আমগো গ্রামের রাস্তায় কেমন পানি?  বললো তোমাগো ঐ রাস্তায় হাটু পানি দেখছিলাম দুপুর বেলায় এখন জানিনা বাড়তে পারে। 
ওনাকে বলে বলে ভাঙ্গা পার হলাম।  উনি লাইট মেরে রাখলেন। ভাঙ্গা পার হয়ে ওনাকে বল্লাম আমি গেলাম তাহলে। বল্লো দেইখা যাইও রাস্তায় সাপ থাকতে পারে।  হাতে থাকা গ্যাস লাইট মেরে মেরে হাটছি।হাটতে হাটতে আসলাম ৩ রাস্তার মোড়ে।  হঠাৎ 
গা কেমন ছমছম করে উলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দেড়টা বাজে। ভয় পেয়ে গেলাম, নাহ এই মোড়ে দাড়ানো যাবে না। পিছনে ঐ লোককে ফেলে আসছি তাও অনেক দুর। বাম দিকে পাকা রাস্তা আমাদের বড় গ্রাম তার আগে বিশাল কবরস্থান ডান দিকে আমাদের গ্রামের কাচা রাস্তা। রাস্তায় পানি দেখা যাচ্ছে এখান থেকে গ্রামের ঐ দিক অনেক নিচু। ঐদিকে কেমন পানি কে জানে। প্যান্ট হাটু পর্যন্ত বাজ করে নিলাম। জুতা খুলে ব্যাগে ডুকালাম। হঠাৎ পানিতে বিকট শব্দ! কেউ ডিল মারলে যেমন হয় ঠিক তেমন। পুরু শরীলের লোম দাড়িয়ে গেছে। আমি রাস্তার সাইটে চলে আসলাম তিন রাস্তার মোড় এমনিতেই ভাল জায়গা না।  
এক মিনিট না পেরুতে আরেকটা ডিল এবার আমার গা ঘেষে পানিতে পরলো স্পষ্ট বুঝলাম। বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। ভাবছি  হাটতে শুরু করবো নাকি দারিয়ে থাকবো। সামনেতো পানি। পানিতে নামলে যদি আমাকে পানিতেই চুবানি শুরু করে।  নানান কিছু ভাবছি।  আর হাতে থাকা গ্যাস লাইট বার বার প্রেস করছি। শুনেছি আগুন হাতে থাকলে কোনোকিছু ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহর নাম নিয়ে দোয়াকালাম যতটুকু জানি পড়ে গায়ে ফু দিয়ে হাটা শুরুকরলাম।  যেইনা হাটুপানিতে এসছি আরেকটা ডিল ঠিক আমার বাম পাশে পরলো। আর শুনলাম কেউ বললো আজকে বেচে গেলি। আমার হাত পা কাপছে মনে মনে ধরেই নিয়েছি এটাই আমার শেষ রাত।
পা টিপে টিপে হাটছি যতই সামনে এগুচ্ছি ততই পানির গভীরতা বাড়ছে।  ডান দিক থেকে বাম দিকে স্রোত যাচ্ছে বোঝা যায়। আমি পশ্চিম দিক থেকে পুর্বদিক যাচ্ছি। হাতে কেসিও ডিজিটাল ঘড়ি সাইট বাটনে চাপ দিলে লাইট জ্বলে টাইম দেখা যায়। ১ঃ৫৫ বাজে।  রাস্তা শুকনা থাকলে ৫ মিনিট হাটার পথ। এখনতো মনে হচ্ছে  আরো আধা ঘন্টাও পৌছতে পারবো না। রাস্তা যেনো ফুরায় না। ভিতরে ভয়ও কাজ করছে খুব।এতক্ষণে আধা রাস্তায় এসে পরেছি বুঝতে পারছি। পানির গভীরতা এখন কোমড় পানিতে আছি। কোনকিছু বোঝে উঠার আগেই বাম দিক থেকে পানির শব্দ আসছে বাচ্চারা পানিতে খেলা করলে যেমন হয় ঠিক তেমন আর ২ টা বাচ্চা হাসছে। বড় করে ডুক গিল্লাম। আর তো কিছু না আমি কোমড় পানিতে আছি এই বুঝি যাতা মেরে ধরলো আমাকে।  নানান কিছু ভাবনায় চলে আসলো। 
চুপচাপ দাড়িয়ে গেলাম। পানির আওয়াজও বন্ধ হয়ে গেলো।বাচ্চাদের আওয়াজও শুনা যাচ্ছে না আর। পিছন থেকে বারি ঝড় তুফানের যেমন সো সো আওয়াজ হয়, ঠিক তেমন আওয়াজ করে মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙ্গেচুরে ধেয়ে আসছে আমার দিকে। দাদার মুখে শুনেছি এরকম কিছু হলে পিছন ফিরে তাকানো যাবে না। ভয়ে তো কলিজার পানি শুকিয়ে যাওয়া অবস্থা। আমি বুঝতে পারছি অনেক কিছু ঘটতে চলেছে আমার সাথে। হয়তো বাচবো হয়তো না।  তবে এরকম পরিস্থিতিতে মনোবল শক্ত রাখা লাগে। সেটাই ট্রায় করছি। চারদিকে অন্ধকার শুধু পানি আর পানি আর সামনে গ্রাম  আপসা আপসা বোঝা যাচ্ছে।  আরেকটু যেতে পারলেই গ্রামের মাথায় মুদি দোকান। দোকানি ভাই হয় তাকে ডাক দিবো। এখান থেকে ডাকলে শুনবে না হয়তো। পায়ের আঙ্গুল টিপে টিপে হাটছি।  
স্লিপ হয়ে পানিতে পরে গেলে যদি তখনই যাতা মেরে ধরে নানান কিছু ভাবছি।  হঠাৎ মনে হলো গ্রামের পিছনে এক চাচাদের পারিবারিক কবরস্থান শুনেছি এক চাচাতো বোনের বাচ্চা অতিরিক্ত সর্দিলেগে রাতে ঘুমের ঘরেই মৃত্যু হয়েছিলো তাকে এখানেই কবর দিয়েছে। একটু আগে বাচ্চার নিদর্শন হয়তো সেটাই বুঝালো। হঠাৎ  কবরস্থানের দিকে চোখ যেতেই ভেলায় করে মৃত্যু দেহ ভাসিয়ে দিলে যেমন দেখায় ঠিক তেমন ভেসে ভেসে আসছে। শরীলের লোম দাড়িয়ে গেছে। পানির স্রোত ডানদিক থেকে বাম দিকে আর এটা ভেসে আসছে বাম দিক থেকে। আর তো কিছু না এটাই সেইটা। দাড়িয়ে গেলাম সুরাকালামতো সেই কখন থেকেই পড়ছি। লাশটা থেকে আমি মাত্র দশ-পনেরো হাত দুরে বোঝা যাচ্ছে রাস্তা ক্রস করবে।
কি করবো বুঝতেছিনা আমি আগে চলে যাবো নাকি অপেক্ষা করবো। শরীলে বল পাচ্ছিনা মনে হচ্ছে পানিতে পরে বেহুশ হয়ে যাবো। দাদার কথা মনে হলো।  এমন কিছু হলে ক্রস করতে নেই অপেক্ষা করা লাগে। দাদার কথা মাথায় রেখে দাড়িয়ে রইলাম।  আনুমানিক ১০ মিনিট হবে লাশটা আমার সামনে দিয়ে ক্রস হয়ে চলে গেলো। হঠাৎ সামনে থেকে কেউ লাইট মারলো। আর বললো কেডায় ঐ খানে মনে সাহস হলো বললাম আমি। ওরা নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে ছিলো।  কাছে আসলো নৌকায় ওঠে বসতেই বেহুশ হয়ে গেলাম।  
তিনদিন জ্বর ছিলো---------👻👺👹

About the author

Fahim Ahmed
Tech Blogger.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন